অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও টানেলের ছবি দিয়ে স্বজাতির প্রতি আরও আগ্রহী করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বইয়ের মধ্যে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির ছবি দেওয়ার কথা। যেমন- কভার পেজগুলোতে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, টানেল এসব ছবি দিয়ে স্বজাতির প্রতি আরও আগ্রহী করার কথা ছিল। যাতে সাধারণ মানুষের দেশের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। তা না করে শিশুদের বাদরামি শেখানোর কৌশল করা হয়েছে।’
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত নগর সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘যে দেশে আজানের শব্দে শিশুদের ঘুম ভাঙে এবং ঘরে ফেরে, জুমার দিনে মসজিদে জায়গা হয় না। সেই দেশে কোথা থেকে বানর জাত এসে আজকে মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। আমরা প্রতিবাদ না করে বসে বসে তা দেখবো, এটা হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে যেমন মুসলিম ইতিহাস ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে, তেমনি শিশুদের মনে বিকৃত মানসিকতা ঢুকিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি বইয়ে মধ্যে ভিনদেশী সংস্কৃতি ও মূর্তি, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদির ছবি দিয়ে ভরপুর করে রাখা হয়েছে। শিশুরা এসব বই পড়ে ভালো মানসিকতা শেখার বদলে শিখবে ইসলাম বিদ্বেষ, ধর্মহীন জীবনযাপন। ফলে মুসলিম প্রধান এ দেশের সন্তানরা দেশপ্রেমিক হবে না। বরং স্বজাতির প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর মনোভাব তৈরি হবে।’
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর কথায় কোনো লাগাম নেই। কোনো জ্ঞানমূলক কথা তার মুখ থেকে আসে না। এর আগে বলেছেন, বইয়ে কোনো ভুল নেই। এখন জাতির কাছে স্বীকার করছেন, ভুল আছে। বারবার তার কথা মিথ্যা প্রমাণিত। আপনি কীভাবে একটি দেশের শিক্ষামন্ত্রী হন?’
তিনি আরও বলেন, ‘যে দেশে শিক্ষামন্ত্রীর অবস্থা এমন হয়, সে দেশের মানুষ ধ্বংসের পথেই যাবে। এটাই তো বাস্তবতা। তাদেরকে ধিক্কার জানাই, যারা বর্তমান এ সিলেবাস তৈরি এবং বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। আমাদের এর প্রতিবাদ জানাতে হবে। এর পরিবর্তন করে ধর্মীয় ইসলামী শিক্ষা সর্বত্র বাস্তবায়ন করতেই হবে।’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই। ন্যায়ের পথে কথা বলার কোনো অবস্থা নেই। আমরা আজ নিষ্পেষিত। নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে। মানুষ না খেয়ে অর্ধাহারে দিন যাপন করছে। এটা সহ্য করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে কিছু মধ্যস্বত্ত্বভোগী, কিছু দুষ্টু প্রকৃতির ব্যবসায়ীদের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এটা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাহলে বুঝতে হবে সরকারের দায়িত্বশীল জায়গায় দুর্নীতিবাজরা বসে থাকার কারণেই তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সেক্রেটারি মাওলানা মো. আরিফুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা মো. নুরুল ইসলাম নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. মুরাদ হোসেন প্রমুখ।
৮ দফা দাবি : সম্মেলনে মাওলানা আরিফুল ইসলাম সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে হতাহতদের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানানো, ডেনমার্ক ও সুইডেনে কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব ও বাংলাদেশে নিযুক্ত উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো, দেশবিরোধী পাঠ্যবই প্রত্যাহার, নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা, নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন অজুহাতে আটক নিরপরাধ আলেমদের মুক্তি, আসন্ন রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
Leave a Reply